শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন
॥মইনুল হক মৃধা॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া পয়েন্টে আরো ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এছাড়াও দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বেশীর ভাগ এলাকা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় অধিকাংশ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
গতকাল ৫ই সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বাড়ী-ঘরগুলোর উঠানে ও রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমেছে। কোমর পানি ভেঙ্গে অনেককে চলাচল করতে হচ্ছে।
দেবগ্রামের মুন্সী পাড়া, আতর আলী চেয়ারম্যানের বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ওই সব এলাকার চারদিকে শুধুই পানি। অনেকের ঘরের ভিতরেও পানি উঠে গেছে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকেই গবাদি পশু রাস্তার উপরে রেখেছে। সেখানেই মানুষ ও গবাদি পশুর খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দেবগ্রামের মুন্সী পাড়ার জবেদা খাতুন ও ইসলাম শেখের বাড়ীর ভিতরে কোমর সমান পানি। তারা বললেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঘরের ভিতর পানি ওঠায় পরিবারের দুই ছেলে, বউ ও নাতিদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাড়ির ভিতর পানি। চারপাশে পানি। অথচ এখন পর্যন্ত কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি।’
একই এলাকার মোসলেম সরদার ও সোলেমান সরদারের বাড়ীর ভিতরে হাঁটু পানি। তারা বললেন, ‘প্রায় ১৫ দিন ধরে ঘরের সামনে পানি ওঠায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বাড়ীর ভিতরে পানি। চারপাশে পানি। এখন পর্যন্ত তাদেরও কেউ খোঁজ নেয়নি।’
একই এলাকার বাসিন্দা লোকমান শেখ বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কোন সীমা নেই। একে তো নদী ভাঙ্গন, তারপর এই পানি। সব মিলিয়ে বড় অশান্তির ভিতরে আছি। প্রতিদিন হাঁটু পানি ভেঙ্গে আমাদেরকে যাওয়া-আসা করা লাগছে। আমাদের কষ্টের সাথে গবাদি পশুরও কষ্ট হচ্ছে। ওগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের দেবগ্রাম, মুন্সি বাজার, কাওয়ালজানি, বেতকা, রাখালগাছী ও উত্তর চর পাঁচুরিয়া এলাকার কমপক্ষে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে থেকে কিছু দিন আগে পানিবন্দী ৬শত পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দেওয়া হবে।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা বন্যা কবলিত মানুষের তালিকা তৈরী করছি। বন্যা দুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ত্রাণ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ২০ মেট্রিক টন চাল বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি।’
Leave a Reply